আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারা অনেক বড় যোগ্যতা গুলোর মধ্যে একটি। হাতে টাকা থাকলেই কেবল খরচ করে ফেলতে হবে ব্যাপারটি এমন নয়। ভবিষ্যতের সঞ্চয়ের প্রয়োজনে পরিণত ব্যয়ের মাধ্যমে আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য রক্ষা করা যায়। আজকের আলোচনায় সেই ব্যাপারটি জানার চেষ্টা করব।
আমাদের আশপাশে অনেকেই আছে অল্প টাকা আয় করে ও বছর শেষে ভালো পরিমাণ টাকা সঞ্চয় করতে পারে আবার অনেকেই আছে মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করার পর দিন শেষে তার কাছে সঞ্চয় করার মত অর্থ থাকে না এবং সে অভাবে পড়ে থাকে।
এজন্য আমাদের প্রত্যেককেই আয় ব্যয়ের ভারসাম্য রক্ষা করে পরিমিত ব্যয়ের মাধ্যমে সঞ্চয়ের মানসিকতা গড়ে তোলা প্রয়োজন। এখানে আমরা কিভাবে এর ভারসাম্য রক্ষা করতে হলে এবং ব্যয়ের ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে সেটি আলোচনা করব। এর মাধ্যমে আপনি ছাত্র জীবনে টাকা আয় ও ব্যয় ব্যবস্থাপনার কৌশল শিখে নিতে পারবেন।
Contents
আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য
শুধুমাত্র আয় করতে পারাটাই কোন যোগ্যতার ব্যাপার নয় বরং সেটি সঠিক জায়গায় ব্যয় করতে পারাটাও অনেক বড় গুরুত্বপূর্ণ যোগ্যতা। এ ব্যাপারটি সবার মধ্যে থাকে না বলেই সবাই সঞ্চয় করতে পারে না এবং একটা সময় এসে অসহায় হয়ে পড়তে হয়।
আপনি কত টাকা আয় করছেন এবং কত টাকা ব্যয় করছেন তার মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে পারাটাই ব্যয়ের ভারসাম্য বলা হয়ে থাকে।
টাকা ব্যয় বা খরচ করার পূর্বে যা ভাবতে হবে
আগে আমরা যা আলোচনা করেছি তার থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট, টাকার ব্যবহার বা টাকার খরচ করা কিন্তু কোন খারাপ ব্যাপার না, শুধুমাত্র এটা লক্ষ্য রাখতে হবে টাকার যাতে অপচয় না হয়।

অর্থাৎ এর ব্যবহার করতে হবে সতর্কতার সঙ্গে। এর একটা ভালো উপায় হলো, যখন তুমি বাজারে যাবে কিছু একটা কিনতে ইচ্ছা করবে তখন আগে নিজেকে কিছু প্রশ্ন করা, যে এই যে আমি জিনিসটা কিনতে চাই-
১। এটা আমি কেন কিনতে চাই? বা তুমি এটা জিজ্ঞেস করতে পারো
২। এটা কি আমার সত্যিই দরকার?
৩। এত দামি জিনিসের পেছনে কেন টাকা খরচ করব?
৪। এটা কী আমার আসলেই কাজে আসবে?
৫। আরো কম দামে কি অন্য কোনো কিছু কেনার সুযোগ আছে? আবার তুমি নিজেকে প্রশ্ন করতে পারো এটা কি আমার না হলেও চলে?
ধরো তুমি একটা দোকানে গেছো, একটা জামা বা শার্ট কিনতে চাচ্ছো। এই শার্টটার দাম ২ হাজার টাকা। এখন তোমার মনে হতে পারে আমি এতদিন ধরে এতগুলো টাকা জমালাম এখন এটা নিমিশেই একটা শার্টের জন্য খরচ হয়ে যাবে?
এখন তুমি দুইটা জিনিস করতে পারো। এক, কোন কিছু ভাবনা-চিন্তা না করেই, হিসাব নিকাশ না করে সোজা ওই শার্টটা কিনে ফেললে। বা দুই, তুমি আরেকটু চিন্তা করে দেখলে যে আচ্ছা এই শার্টটা আমার কেনো চাই?
এটার পেছনে কি এমন কোন কারণ খাকতে পারে? যে আমি আমার বন্ধুকে দেখেছিলাম এমন একটা শার্ট পরতে, তাই আমিও এই শার্টটা কিনতে চাই। বা তোমার মধ্যে কি এমন কোনো ইচ্ছা আছে যে, আমি এই দামি শার্টটা কিনবো এবং দেখাবো- এই দেখো আামি একটা দামি শার্ট কিনেছি।
পণ্য কেনার আগে ভেবে নিন
আসলে এই বিষয়গুলো এই ধরণের দামি জামা-কাপড় কেনার ব্যাপারে কিন্তু যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ কারণ নয়। এসব বিষয়ে টাকা খরচ করার দরকার তখনই যখন তোমার সেটা সত্যিই দরকার।
তুমি ভেবে দেখতে পারো এই দোকানগুলোতে যখন মূল্যছাড় দেয়া হয়, তখন কিন্তু এই একই শার্ট আরও কম দামে পাওয়া যায় তাই তখন তুমি চাইলে এই দোকানগুলোতে গিয়ে তোমার পছন্দের শার্টগুলো আরও কম দামে পেতে পারবে।
এই বিষয়গুলো বিবেচনা করে যদি তুমি কেনাকাটা করতে যাও তাহলে দেখবে তোমার ওই অতিরিক্ত খরচগুলো কিন্তু অনেকটাই কমে এসেছে।
ব্যয়ের হিসাব পর্যালোচনা করুন

এভাবেই তুমি হিসাবের খাতা খোলার সময় খেয়াল করে দেখবে যে তুমি কোন খাতগুলোতে একটু বেশি বেশি খরচ করছো। সবার প্রথমেই এই খাতগুলো চিহ্নিত করে ফেলো।
এরপরে এই খাতগুলোতে যদি তুমি সতর্কতার সাথে খরচ করো তাহলে দেখবে তোমার আয়ে-ব্যয়ে অনেকখানি ভারসাম্য চলে এসেছে। প্রয়োজনের থেকে বেশি খরচ আয়-ব্যয়ের ভারসাম্যটোকে নষ্ট করে দেয়।
তাই পরিমিতভাবে খরচ করার যে বিশিষ্ট নিয়মগুলো আছে বা উপায়গুলো আছে, সেগুলো যদি আমরা মেনে চলি তাহলে কিন্তু এটা করা আরও সহজ হয়ে যাবে।
পরিমিতভাবে খরচ করার উপায়
এই উপায়গুলোর প্রথমটি হলো যখনই কোন কিছু কিনবে, তখন কেবল ওই জিনিসটিই কিনবে যা তোমার আসলেই দরকার। আর যদি খুব বেশি দামি না হয়, দু-একটি শখের জিনিসও কেনা যায়।
অথবা আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য আনতে এমন সব দোকান থেকে কেনাকাটা করো, যেখানে কিনা ভাল জিনিসও কম দামে পাওয়া যায়।
আবার সেইসব খাত যেখানে নিয়মিত খরচ হয় যেমন ফোনবিল সেখানে তোমরা একটু চেষ্টা করবে, খরচটা কমিয়ে আনার। দেখবে, যেহুতু এখানে নিয়মিত খরচ করা লাগে প্রতিদিনই যদি অল্প অল্প করে সঞ্চয় করতে পারো তাহলে অনেকখানি টাকা তুমি বাচিয়ে ফেলতে পারবে।
এমন আরেকটি উদাহরণ হলো টিফিনের খরচ। টিফিন যেহেতু আমরা প্রতিদিনই কিনি তাই অনেকসময় দেখা যায় এর পেছনে নিয়মিতভাবে খরচ হতে থাকে।
এর বদলে তুমি যদি মাঝে মাঝে বাসা থেকে খাবার নিয়ে আসো, বা একটু কম টাকায় টিফিন কিনে খাও, তাহলেও কিন্তু দেখা যাবে তুমি অনেকটুকু টাকা সাশ্রয় করতে পারছো।
যখন যা কিনবে তার রসিদ রেখে দাও। এটা কোন কিছু বদলানোর কাজে আসবে বা মাস শেষে বুঝতে সাহায্য করবে যে কোন কোন খাতে কত টাকা খরচ হয়েছে।
নির্ধারিত ব্যয়ের তালিকা করে নিন
যা যা কিনতে হবে প্রথমে একটা লিস্ট করে ফেলো। তাতে যেটা সুবিধা হবে, তোমার এই লিস্টের বাইরে খুব বেশি কেনাকাটা হবেনা। আবার যে জিনিসগুলা বেশি বেশি দরকার, সেগুলো একবারে বেশি করে কিনে ফেলতে পারবে। তাতে অনেক সময় আরেকটু কম দামে কেনা যায়।
ওই যে নিয়মিত খরচের কথা বলছিলাম, যাতায়াতও কিন্তু নিয়মিত খরচ। আর এই যাতায়াত যদি বাস বা অন্য কোন গণপরিবহনে করো তাহলে দেখবে খরচ অনেকটাই কমে এসেছে।
আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য করতে সাশ্রয়ী হওয়া শিখুন
যদি রিকশা বা ট্যাক্সিতে যাতায়াত এর প্রয়োজন হয়, তাহলে সেটা বন্ধুর সঙ্গে ভাড়া ভাগাভাগি করে নাও। দেখবে তোমার ভাগের অংশটা কমে এসেছে।
গিফট বা উপহার সাশ্রয়ী করে ফেলার চেষ্টা করো। গিফট কিন্তু লোক দেখানোর জন্য না, বন্ধু বা প্রিয় মানুষকে তোমার ভালোবাসাটুকু পৌছে দেওয়ার জন্য। তাই লোক দেখানোর জন্য নিজের পকেটের ক্ষতি করার কোন দরকার নেই।
বাসার কোনো জিনিসে ছোটখাটো সমস্যা হলে নিজেই আগে ঠিকঠাক বা সারানোর চেষ্টা করো। তাতে দেখবে অনেকখানি মেরামতের খরচ কিন্তু কমে গেছে এবং বারবার কিন্তু জিনিস বদলানোও লাগছেনা।
সারসংক্ষেপ
এই পরামর্শগুলো শুধু তোমাদের জন্য না। বিশ্বের যে ধনী ধনী দেশগুলো আছে সেখানেও কিন্তু স্কুলের ছেলেমেয়েদের এগুলো শেখানো হয়। যাতে করে তারা আয় এবং ব্যয়ের ভারসাম্যটা মেনে চলতে পারে।
এর মধ্যে বিন্দুমাত্র গ্লানি নেই। গ্লানি আছে অপচয়ে। টাকার সঞ্চয় তোমাকে জীবনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। এই বয়সে খরচ মেপে করার অভ্যাস না করলে কিন্তু ভবিষ্যতে বিপদে পড়ার আশঙ্কা থাকে।
প্রিয় পাঠক, আশা করছি এই আর্টিকেল আপনাকে আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য রাখতে পরিমিত ব্যয় করার উপায় শিখতে সহযোগিতা করবে। নিয়মিত এই ধরনের নতুন নতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আপনাদের জন্য কয়েকটি প্রশ্ন রাখা হয়েছে। সেগুলোর উত্তর কমেন্ট বক্সে দিন।
কোনটি আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়?
ক. প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত খরচ;
খ. প্রয়োজনের চেয়ে কম খরচ;
গ. আয়ের হিসাব না রাখা;
ঘ. শুধুমাত্র ব্যয়ের হিসাব রাখা;
নিচের কোন অভ্যাসটি গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি?
ক. বাড়তী খরচ;
খ. টাকার অপচয় থামানো;
গ. উপহার দেয়া;
ঘ. টাকার অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার;
কোনো জিনিস কেনার আগে আমরা কি করতে পারি?
ক. সেই জিনিসের ওপর গবেষণা করতে পারি;
খ. আরও আয় বাড়ানোর চিন্তা করতে পারি;
গ. নিজেকে কিছু প্রশ্ন করতে পারি;
ঘ. চিন্তা আসার সাথে সাথে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি;
টিফিনের খরচ কমানোর উপায় কোনটি?
ক. সবাই মিলে ভাগ করে একটা খাবার খাওয়া;
খ. বাসা থেকে খাবার নিয়ে যাওয়া;
গ. টিফিনে কোনো খরচ না করা;
ঘ. বন্ধুর টিফিন খাওয়া;
অনেক সময় কেন আমরা কোনো জিনিসের পেছনে অর্থ ব্যয় করে ফেলি?
ক. অন্য কাউকে সেটা ব্যবহার করতে দেখে;
খ. বিদেশ ভ্রমণের কারণে;
গ. অনেক সঞ্চয় হয়েছে তাই;
ঘ. টাকা খরচের জন্য;
যাতায়াত ভাড়া কমানোর ভালো উপায় কোনটি?
ক. দূরের পথেও হেঁটে যাওয়া;
খ. গণপরিবহনে চলাচল;
গ. মোটর সাইকেল কিনে ফেলা;
ঘ. নিজস্ব গাড়ি ব্যবহার;
খুবই দরকারি জিনিস কেনার পর কোন ধরনের জিনিসে খরচ করা যেতে পারে?
ক. খেলনা;
খ. শখের দু’ একটা জিনিস;
গ. সৌখিন দ্রব্য;
ঘ. জামা কাপড়;
কোনো দামী জিনিস কিনতে চাইলে কোনটি সেই খরচ কমানোর একটি ভালো উপায় হতে পারে?
ক. মূল্য ছাড়ের অপেক্ষা করা;
খ. সেই দ্রব্যের বিকল্প খোঁজা;
গ. আরও দুই এক দোকানে দাম মিলিয়ে দেখা;
ঘ. সবগুলো;
সূত্র: মুক্তপাঠ