আয়-ব্যয়ের হিসাব রাখা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি কাজ। খরচের হিসাব সঠিকভাবে সংরক্ষণের নিয়ম ও প্রয়োজনীয়তা অনেক। আমরা আজকে জানবো কিভাবে খরচের সঠিক হিসাব রাখবেন এবং এর প্রয়োজনীয়তাই বা কতটুকু।
আপনার আয়কৃত টাকা কোথায় যাচ্ছে সে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। ব্যয়ের খাত গুলো জানা থাকলে সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এবং সঞ্চয়মূখী হওয়া যায়। চাইলে পড়ে নিন ছাত্র জীবনে টাকা আয় ও ব্যয় ব্যবস্থাপনার কৌশল;
Contents
খরচের হিসাব সংরক্ষণ
আমরা আগেই বলেছি, তোমার হাত খরচ ১০০ টাকা নাকি ২০ টাকা, সেটি বড় কথা নয়। কেউ কেউ আছে যারা বছরে লাখ টাকা আয়ের পরও দেখা যাবে সেটা তারা কোনো কাজেই লাগাতে পারছে না।
তার হাতে কোনো টাকা থাকে না, কারণ, সে যখন যা পায় সেটা ইচ্ছামত খরচ করে ফেলে। আবার কেউ কেউ বছরে মাত্র ৫ হাজার টাকা আয় করে কিন্তু তবুও সেটা বুঝেশুনে খরচ করে এবং এ কারনেই অল্প অল্প করে কিছু টাকা জমিয়ে, নিজের জন্য ছোট ছোট শখগুলো পূরণ করতে পারে এবং ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করতে পারে।
তাই স্বপ্ন পূরণের জন্য সবচেয়ে বড় ধাপটি হলো, নিজের আয়ের সঙ্গে খরচের মিল রেখে চলা। তোমাকে যদি প্রশ্ন করি,
১. তুমি কি কখনো হিসেব করে দেখেছ তুমি তোমার আয়ের টাকা কিভাবে ব্যবহার করছো?
২. সবই খরচ হয়ে যাচ্ছে, নাকি কিছু জমাতেও পারছো?
৩. কোন খাতে তোমার সব থেকে বেশি খরচ হচ্ছে?
৪. যদি কখনো হিসাব না করে থাকো, তাহলে এখনই শুরু করে দাও। কিন্তু খরচের হিসাব রাখার সঠিক উপায় কী?
৫. এর জন্য সবার আগে বুঝতে হবে- তোমার টাকা কোথায় যাচ্ছে?
- আরও পড়ুনঃ মানসিক দুশ্চিন্তা কমাতে দুটি মোবাইল গেম
দৈনিক ব্যয়ের হিসাব
এই হিসাব রাখার জন্য সবার আগে দরকার একটি হিসাবের খাতা বা ডায়েরী এবং কলম। প্রথমেই তোমার আয় ও ব্যয়ের উৎসগুলো লিখে ফেলো, কোথা থেকে কত টাকা আয় হয়, কোন কোন জিনিসের পেছনে কত টাকা খরচ হয় এ জিনিসগুলো লিখে ফেলতে হবে।
আয়ের উৎস নিয়ে তো আমরা কথা বলেছিই, ব্যয়ের খাতের মধ্যে থাকতে পারে যাতায়াত, টিফিন বা বন্ধুদের আড্ডায় খাওয়া দাওয়া, গিফট, গল্পের বই বা শখের অন্যান্য জিনিস কেনা- এই নিয়মিত খরচের খাতগুলোও আমরা লিস্ট করে ফেলবো।

এরপর প্রতিদিনের একটা তালিকা করে ফেলো- একদিকে কত টাকা পেলে, অপরদিকে কত টাকা খরচ হল। প্রতিদিনের তারিখ দিয়ে নিচে নোট করে ফেলো- আজ কত টাকা পেলাম, আর সেই টাকা কোথায় খরচ করলাম, কী কী কিনলাম।
এমনকি একটা চকোলেটও যদি দুই টাকা দিয়ে কিনে থাকো, সেটাও দিনের হিসাবে তুলে রাখো। সবার শেষে প্রতিদিন কত টাকা বাকি থাকলো তার একটা হিসাব রাখো।
মাসিক খরচের হিসাব
এ তো গেলো দিনের হিসাব। এভাবে মাস শেষে আরেকটি তালিকা বানাও। সেখানে খরচের সম্ভাব্য সব খাতে প্রতিদিনের খরচগুলি ট্যালি করে হিসাব করো।
এক মাসে কত টাকা যাতায়াতে গেল, কত টাকা গেল খাওয়ার পেছনে, কত টাকা গল্পের বই বা শখের কোনো জিনিস কিনতে গেল। এভাবে প্রতিটি খাতে এক মাসে কত টাকা খরচ হলো তার একটা হিসাব পাওয়া যাবে।
মাস শেষে সেই হিসাব দেখে বুঝতে পারবে, সবচেয়ে বেশি টাকা কোথায় যাচ্ছে। তুমি কি সব টাকা চটপটি আর ফুচকা খেয়েই শেষ করে ফেলছো? নাকি মুভি দেখা হচ্ছে বেশি বেশি।
সব মাসে হয়তো খরচের হিসাব এক রকম নাও হতে পারে। এক মাসে হয়তো দেখা যাবে বেশ কয়জন বন্ধুদের জন্মদিন ছিল, যে জন্য গিফটেই অনেক টাকা চলে গেছে।
আবার অন্য মাসে কোন বাড়তি তেমন কোন খরচই হয়নি। এই তালিকাটি দেখে বুঝতে পারবে, যেই খাতে অনেক বেশি টাকা খরচ হয়েছে আসলেই কি সেই খাতে এত টাকা খরচ করা জরুরি ছিল?
ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করতে শেখা
আমরা যখন কেনাকাটা করি, তখন প্রায়ই মনে হয়, এটার দাম তো সামান্য। এ আর এমন কী। ১০ টাকার এক প্যাকেট চিপ্স কিনলে কতই বা খরচ বাড়বে বা আমার কত টাকাই বা কমে যাবে?
কিন্তু প্রতিদিনকার সেই সামান্য কেনাকাটা হয়তো কোন একটা সঞ্চয়ের সম্ভাবনাকে নষ্ট করে দিচ্ছে। হিসাব রাখার অভ্যাস থাকলে কোন খাতগুলোতে সচরাচর অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে, সেগুলো চিহ্নিত করতে পারবে এবং নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।
এখানে একটা বিষয় একটু পরিষ্কার হওয়া ভালো। এত হিসাব রাখার মানে এই নয় যে তুমি একদম কৃপণ হয়ে যাবে। কোনো খরচই করবে না, শুধু জমাবে।
সবাইকেই খরচ করতে হয়। তোমারও প্রতি মাসে কিছু না কিছু কিনতে/ খরচ করতে হবে। কিন্তু সঠিকভাবে হিসাব রাখলে সেই খরচের ওপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব।
তখন তুমি বুঝতে শিখবে, কোথায় খরচ বেশি খরচ হচ্ছে, সেখানে কি সত্যিই এত খরচের দরকার ছিল কিনা? হিসাব না রাখলে হয়তো বোঝাই যাবে না, কত অপচয় ঠেকানো যেত।
আয় আর ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য
টাকার সঠিক ব্যবহারের জন্য আয় আর ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য আনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হিসাব সেই কাজটাকে অনেক বেশি সহজ করে দেবে।
যদি তোমার এভাবে দৈনিক ও মাসিক তালিকা করার অভ্যাস না থাকে তবে তোমার জন্য আমরা উদাহরণস্বরূপ একটি তালিকা তৈরি করে দেখাচ্ছি।
এটি একটি ধারণা মাত্র। তালিকা এমনই হতে হবে তা নয়। এটি একেক জনের জন্য একেক রকম হতে পারে।
নিচের ভিডিওতে খরচের হিসাব সঠিকভাবে সংরক্ষণের নিয়ম ও প্রয়োজনীয়তা সংক্রান্ত আরও বিস্তারিত জানুন
দিনের এবং মাসের হিসাব রাখার মাধ্যমে কোন বিষয়টি খুঁজে পাওয়া যায়?
ক. ইলেকট্রনিকস পণ্যের প্রকৃত মূল্য;
খ. বাজেটে কোন জিনিসের দাম বাড়বে;
গ. বাজারে নতুন ব্যান্ড্রের কি কি জিনিস আসছে;
ঘ. কোন কোন খাতে বেশি ব্যয় হয়েছে;
শখ পূরণ সম্ভব কীভাবে?
ক. অন্যের কাছ থেকে ধার করে কিনে ফেলা;
খ. বুঝে শুনে অর্থ খরচের মাধ্যমে;
গ. শখ কমিয়ে ফেলে;
ঘ. সব টাকা জমিয়ে রেখে;
খরচের সঠিক হিসাব রাখার উপায় কি?
ক. আয় বেশি করা;
খ. সঞ্চয় পত্রে বিনিয়োগ করা;
গ. ব্যয় বেশি করা;
ঘ. টাকা কোথায় যাচ্ছে তা হিসাব রাখা;
সঠিকভাবে খরচ আমাদের কি শেখায়?
ক. কৃপণ হতে;
খ. ব্যয় একেবারে কমিয়ে ফেলতে;
গ. আয় বাড়াতে;
ঘ. খরচের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনতে;
খরচের সঠিক হিসাব রাখার জন্য কোনটি সবচেয়ে বেশি কার্যকরী?
ক. মাসের শুরুতে খরচ করা;
খ. বন্ধুর কাছে হিসাব রাখা;
গ. যেকোনো কিছু কেনার আগে পরামর্শ নেয়া;
ঘ. আয় ব্যয়ের তালিকা তৈরি;
প্রতিদিনের সামান্য খরচ কিসের সম্ভাবনা নষ্ট করে দেয়?
ক. বিনিয়োগের;
খ. আয়ের;
গ. প্রিয় জিনিসে খরচের;
ঘ. সঞ্চয়ের;
সূত্রঃ মুক্তপাঠ