বর্তমানে প্রায় সকল অভিভাবক শিশুদের মোবাইল আসক্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন। শিশুদের হাতে স্মার্টফোন দেয়ার সঠিক বয়সটি আপনার জানা থাকলে কখন আপনার শিশুর হাতে মোবাইল দিবেন সেই বিষয়টি আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন।
আমাদের দেশের সহ বিশ্বের প্রায় অনেক দেশের অভিভাবক শিশুদের হাতে স্মার্টফোন দেয়ার বিষয়টি নিয়ে অনেকটা উদাসীন থাকেন। শিশুকে খাওয়ানো বা পড়ালেখা করার জন্য আমরা প্রায় তাদের হাতে স্মার্ট ফোন তুলে দেই এবং তাদেরকে ব্যস্ত রাখে।
কিন্তু আমাদের এই ছোট ছোট কাজগুলো একসময় ভয়ানক রূপ ধারণ করে এবং শিশুরা অনেক সময় মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়ে যার থেকে ফেরানো অনেকটা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই কোন বয়সের শিশুর সাথে মোবাইল দিবেন সেই বিষয়টি জেনে নিন।
এখন মোবাইল প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে গত কয়েক বছরে ইন্টারনেট এবং স্মার্টফোন মানুষের নিত্যদিনের ব্যবহার্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইন্টারনেটের অভাবনীয় উন্নয়ন এবং স্মার্টফোনের নতুন নতুন ফিচারের কারণে মানুষের জীবন যাত্রার মান সহজ হলেও ক্ষেত্রবিশেষে বিষয়টা ভাবনার সৃষ্টি করে।
বর্তমান বিশ্বে প্রায় ৬৮০কোটি স্মার্টফোন ব্যবহারকারী রয়েছে যার মধ্যে অনেকেই ছোট শিশু তা বলা ভুল হবে না। ফোনের ব্যাটারি ভালো রাখতে ৩ টি অভ্যাস গড়ে তুলুন পড়ে নিন।
Contents
শিশুদের হাতে স্মার্টফোন
শিশুদের স্মার্টফোন ব্যবহারের যেমন ইতিবাচক দিক রয়েছে ঠিক তেমন নেতিবাচক দিকো রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের গবেষকদের গবেষণায় উঠে এসেছে ঠিক কত বছর বয়সে আপনার শিশুর হাতে স্মার্টফোনটি তুলে দিবেন।
স্মার্ট ফোনের কল্যাণে এখন শিশু-কিশোররা থেকে শুরু করে সবাই তথ্য সংগ্রহ এবং ব্যক্তিগত প্রয়োজনে খুব সহজে ইন্টারনেট ব্যবহার করে অথবা স্মার্ট অ্যাপ ব্যবহার করে পড়াশোনা এবং অফিশিয়াল কাজকে সহজ করতে পারে।
প্রযুক্তির সাথে এডজাস্ট করার জন্য আপনার শিশুকে অবশ্যই স্মার্টফোন দিতে হবে তবে সেটা কখন সেই ব্যাপারে আপনার ধারণা থাকা উচিত। গবেষকদের উঠে আসা তথ্যের ভিত্তিতে আজকে আপনাদের এই বিষয়ে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করব।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিদ্যালয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা অফ স্টেটের প্রধান পরিদর্শক আমল্ডা পিল ম্যানের পরামর্শ অনুযায়ী অল্প বয়সি শিশুদের হাতে ইন্টারনেট সুবিধা এবং স্মার্ট ফোন দেয়া কখনই উচিত নয়। বিবিসি রেডিও ৫ এর একটি লাইভ অনুষ্ঠানে এই গবেষক বলেন তিনি শিশুদের হাতে অবাধে ইন্টারনেট ও স্মার্ট ফোন তুলে দেয়ার বিরোধী।
তিনি আরো বলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে এমন শিশুদের কাছে স্মার্টফোন দেখলে তিনি অবাক হয়ে যান সেইসাথে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে ও মোবাইল ফোন দেখলে তিনি বিস্মিত হন।
তিনি বলেন শিশুদের হাতে অল্প বয়সে ইন্টারনেট সুবিধা এবং স্মার্টফোন তুলে দেয়া এটা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। শিশুদেরকে এই সকল অবাঞ্ছিত অভ্যাস এড়িয়ে চলতে বিদ্যালয়ে এবং অভিভাবক পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টি সহ পর্যাপ্ত ভুমিকা রাখতে পরামর্শ দিয়েছেন।
শিশুদের স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক
অল্প বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট সুবিধা দেয়া যাবে কিনা এ বিষয়ে বিশ্বব্যাপী নানা গবেষণা হয়েছে। এর আগে চালানো বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে স্মার্টফোনে বেশি সময় কাটানো শিশুদের বিভিন্ন ধরনের সামাজিক ও শারীরিক সমস্যা তৈরি হয়।
শিশুরা বেশিক্ষণ ধরে স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলে চোখের দৃষ্টিশক্তিতে সমস্যা, মানসিক চাপ বৃদ্ধি, নিদ্রাহীনতা ও মেধাবিকাশের সমস্যায় পতিত হয়।
তারা বেশিক্ষণ ধরে স্মার্টফোন নিয়ে পড়ে থাকলে তাদের শারীরিক কার্যক্ষমতা কমে যায় এতে করে তাদের স্থূলতা বেড়ে যায় সেই সাথে শিশুদের আত্মসম্মানবোধ কমে যাওয়া এবং মানুষের সঙ্গে মিশতে অসুবিধা হওয়া শুরু হয়।
স্মার্টফোনে বেশি সময় কাটানো শিশুরা সরাসরি বন্ধুত্ব এবং সামাজিক সম্পর্ক থেকে দূরে সরে যায় এবং একাকীত্ব অনুভব করতে থাকে।

স্মার্টফোনের সময় কাটানো শিশুদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি নিয়ে আসে সেই সাথে এক ঘন্টার বেশি স্মার্টফোন ব্যবহার করলে দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের বিষণ্ণতা এবং উদ্বিগ্নতা তৈরি হয়। এই প্রতিবেদনটি উঠে আসে সান্ডিয়া গো স্টেট ইউনিভার্সিটি এক গবেষণায়।
গত ২০ বছরের চেয়ে বর্তমানে শিশু-কিশোরীরা অনেক বেশি নিঃসঙ্গতায় ভোগে এর অন্যতম কারণ হিসেবে বলা হয় স্মার্টফোনে অতিরিক্ত আসক্ত থাকার কারণে তারা বন্ধুদের সাথে সরাসরি সময় কাটাতে পারেনা এবং খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করতে পারে না।
যে সকল শিশুরাই স্মার্টফোনে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করে তাদের মস্তিষ্কের গঠন কিছুটা আলাদা হয় এবং তারা সামাজিকভাবে এবং ব্যক্তিগতভাবে নিঃসঙ্গতার সময় কাটায়।
যুক্তরাষ্ট্রের শিশু অধিকার কমিশনের প্রধান ড্যাম রাসেল ডিসুজা মতে ছোট শিশুদের স্মার্টফোন কিনে দেওয়া এবং ব্যবহার করতে দেয়া সম্পূর্ণ বন্ধ করা উচিত। সেই সাথে প্রত্যেক মা-বাবাকে সন্তানদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রবেশের বিষয়টি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণে রাখা উচিত।
কখন শিশুর হাতে স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট দেওয়া উচিত
Microsoft এর প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস জানান তিনি তার সন্তানদের ১৪ বছর পার হওয়ার আগে স্মার্টফোন ব্যবহার করতে দেননি। তার এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ধারণা করা যায় যে ছোট শিশুদের প্রযুক্তির ব্যবহার বা স্মার্টফোনের ব্যবহার কতটা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
বিল গেটস মনে করেন শিশুদের ক্ষেত্রে স্মার্টফোনও ইন্টারনেট ব্যবহারের সীমারেখা নির্ধারণ করা প্রয়োজন। খুব অল্প বয়সে শিক্ষার্থীদের স্মার্ট ফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা দিয়ে তাদের মনোদৈহিক গঠনে বাধা তৈরি করা উচিত নয়।
উপরোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায় শিশুদের বয়স ১৬ বছর পার হওয়ার পর অর্থাৎ মাধ্যমিক এর গণ্ডি পার হলেই আপনি তার হাতে স্মার্টফোনও ইন্টারনেট সুবিধা দিতে পারেন।
তবে এর মধ্যে তাকে কম্পিউটার বা ল্যাপটপ ব্যবহারে মনিটরিং এর মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় শিখতে সহযোগিতা করতে পারেন এতে করে প্রযুক্তির সাথে সে সহজেই খাপ খাওয়াতে পারবে।
শিশুর হাতে স্মার্টফোন দেয়া কি আসলেই ক্ষতিকর
কিছু কিছু গবেষণা বলছে শিশুদের হাতে স্মার্টফোন দেয়া উচিত। কারণ তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে সে সকল শিক্ষার্থী এগিয়ে যারা স্মার্টফোনে বিভিন্ন শিক্ষনীয় বিষয়ে চর্চা করে এবং অনলাইনে পার গ্রহণ করায় পারদর্শিতা থাকে।
কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাসের সময়কালীন বিশ্বব্যাপী শিশুদের পাঠদান কার্যক্রম অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে চালিয়ে নেয়া হয়েছে এতে করে যে সকল শিক্ষার্থীরা স্মার্টফোন ব্যবহার করেনি তারা স্মার্টফোন ব্যবহার করতে হয়েছে।
কিছু কিছু গবেষক স্মার্টফোন শিশুদের জন্য আসলেই ক্ষতিকর বলে মনে করেন না। টান ফুড ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিন এর এক গবেষণায় উঠে এসেছে যে বয়সে শিশুরা স্মার্টফোন হাতে পায় তার সঙ্গে তাদের সুস্থতার কোন সম্পর্ক থাকে না।
ইউনিসেফ কর্তৃক চালানো এক গবেষণায় উঠে আসে যে সকল শিশু ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারদর্শী তাদের ডিজিটাল দক্ষতা বেশি এবং অনলাইনে শিক্ষা গ্রহণে তারা অনেকের চেয়ে এগিয়ে থাকে।
পরিশেষ
পরিশেষে আমরা বলতে পারি স্মার্টফোন শিশুদের হাতে যে বয়সেই দেন না কেন তাকে সঠিকভাবে মনিটরিং করা গেলে এটি সবসময় কেবল খারাপ কিছু বয়ে আনবে তেমন নয় আপনার কঠোরতা এবং নিয়ন্ত্রণের কারণে অবশ্যই শিশুর জন্য সেটা পজিটিভ হতে পারে।
শিশুদের হাতে স্মার্টফোন দিলেও আপনাকে সেটা ব্যবহারের সময়সূচী নির্ধারণ করে দিতে হবে এবং প্যারেন্টাল কন্ট্রোলের মাধ্যমে আপনার শিশু কখন কখন এই স্মার্টফোন ব্যবহার করতে পারবে সেই বিষয়ে আপনি নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে।
তথ্য সূত্রঃ ডেইলি মেইল
2 Comments
Pingback: ডিভাইসে যে ধরণের অ্যাপ ডাউনলোড করতে দিবেনা গুগল - Fabush
Pingback: মাধ্যমিক ১২৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে 'টোটাল ফিটনেস প্রোগ্রাম (TFP)' বাস্তবায়ন